October 22, 2024, 7:27 am

ঈদে চিকিৎসক ছুটিতে শেবাচিমে ৩৭ রোগীর মৃত্যু

ঈদে চিকিৎসক ছুটিতে শেবাচিমে ৩৭ রোগীর মৃত্যু

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ঈদের সরকারি ছুটির ৪ দিনে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩৭ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ব বৃহৎ সরকারী এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ভরসা ছিল কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্স। সিনিয়র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বেশীর হাসপাতালে না আসায় চিকিৎসাধীন ২ শিশু ও ১১ নবজাতক সহ ৩৭ জনের মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ ছুটি ভোগকারী চিকিৎসকেরাই বেশীর ভাগই বরিশাল নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা।

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সিনিয়র চিকিৎসকগন যদি মানবিক বিবেচনায় দিন অন্তত একবার হলেও হাসপাতালে এসে মুমূর্ষ রোগীদের দেখতেন, তবে হয়ত কিছু মানুষের জীবন রক্ষা সম্ভব হত। এমনকি ঈদের বন্ধে সিনিয়র চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৮৩ জন।

এছাড়া একই সময়ে বেশ কয়েকজন রোগী পালিয়েও গেছেন। হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্ট্রার থেকে জানা যায়, গত ৭ জুলাই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ নবজাতক এবং ৩ জন শিশু সহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

একই দিনে নতুন ৩শ ৫১ জন রোগী ভর্তি হলেও চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১শ ৫১ জন। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়েছেন আরো ৩২ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন ৩৮ জন। পালিয়ে গেছে ৩ জন। চিকিৎসাধীন ছিলো ১ হাজার ৭৩ জন রোগী। ৮ জুলাই ২শ ৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও ২শ ২৫ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়েছেন ৮৩ জন রোগী। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন ২৯ জন এবং পালিয়েছেন ১৩ জন রোগী। চিকিৎসাধীন ১ হাজার ৪৩ জনের মধ্যে এদিন ৮ নবজাতক সহ ১৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ঈদের সরকারি বন্ধের প্রথম দিন ৯ জুলাই হাসপাতালটিতে ৩শ ৪৬ জন রোগী ভর্তি হলেও ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেছেন ২শ ৪৫ জন।

স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়েছেন ১শ ১৬ জন। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন ২১ জন। চিকিৎসাধীন ১ হাজার ১২ জন রোগীর মধ্যে সেদিন ৫ নবজাতক ও ২ শিশুসহ ১৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়। ঈদের দিন, ১০ জুলাই নতুন ৩শ ৫ জন রোগী ভর্তি হলেও ছাড়পত্র দেয়া হয় ১শ ৩৭ জন রোগীকে। তবে স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নেন আরো ১শ ৬২ জন। অন্য হাসপাতালে যায় ২৩ জন এবং পালিয়ে যায় ২ জন রোগী।

ঈদের দিনও হাসপাতালটিতে দুই নবজাতক সহ ৬ জন রোগীর মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়। ঈদের পরদিন, ১১ জুলাই হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ নবজাতক সহ ১৪ রোগীর মৃত্যু হয়। এদিন ৪শ ১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও সুস্থ হওয়ায় ছাড়পত্র দেয়া হয় ১শ ৬৫ জনকে। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নেন ১শ ৫ জন। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে যান ৩১ জন এবং পালিয়ে যান ৩ জন রোগী।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালে গড় মৃত্যুর হার স্বাভাবিকই আছে। ঈদের বন্ধে মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী ও প্রসূতি, শিশু বিভাগ এবং জরুরী বিভাগ সহ পুরো হাসপাতাল হিন্দু ধর্মাবলম্বী চিকিৎকদের দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বরে জানিয়ে কোথাও কোন সমস্যা হয়নি বলেও দাবী করেন তিনি।

হাসপাতালে নিজস্ব চিকিৎসকের মোট ২২৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪৭ জন। ঈদের স্বাভাবিক বন্ধে হাসপাতালের নিজস্ব চিকিৎসকদের তেমন কেউ ছুটি নেয়নি বলে পরিচালক জানান। তবে মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত চিকিৎসকগনের ছুটির বিষয়টি কলেজের বিষয় বলে তার অজানা বলেও জানান তিনি। সূত্র: ইনকিলাব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com